পরিবার ও সমাজে শিশু (পাঠ ১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান শিশুর বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক | - | NCTB BOOK
211
211

আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পরিবারে বাস করি। একটি বাড়িতে সাধারণত মাবাবা, ভাইবোন আরও অন্যান্য সদস্য একসাথে থাকার যে প্রতিষ্ঠান সেটি হলো পরিবার। সন্তানেরা শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্কে পৌঁছায়। সন্তানদের বিয়ের মাধ্যমে আরও কয়েকটি পরিবার তৈরি হয়। এভাবে পরিবারের জীবনচক্র চলতে থাকে।
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানবশিশু সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। সে থাকে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল। শিশু খুব ধীরে ধীরে বড় হয়। তার আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য বছরের পর বছর সহায়তা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দরকার হয়। পরিবার এ দায়িত্ব পালন করে। পরিবার শিশুর আশ্রয়। জন্মের পর থেকে সমবয়সিদের সাথে মেলামেশার পূর্ব পর্যন্ত শিশুটিকে পরিবারই সঙ্গ দিয়ে থাকে।
জন্মের পর পরিবারের সাথে শিশুর একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। বড় হওয়ার সাথে সাথে এই সম্পর্ক পরিবর্তন হতে থাকে। সে নিজের কাজ নিজে করতে পারে, নিজের মতামত দিতে পারে, পরিবারের ছোটখাটো কাজে অংশ নিতে পারে। পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শিশুরা পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে যায়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যে যতো বেশি একে অন্যের সহযোগিতা করে, অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে, দুঃখকষ্ট ভাগাভাগি করতে পারে, বন্ধুভাবাপন্ন হয়, পরিবারের কাজে অংশ নেয় সে তত পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারে।
পরিবার সমাজের ক্ষুদ্র একক। কয়েকটি পরিবার নিয়ে হয় একটি সমাজ। আদিম যুগে যখন পরিবার প্রথা ছিল না তখনো মানুষকে খাবার জোগাড় করতে হতো, হিংস্র প্রাণী থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হতো, এ রকম ভয়ানক বিপদ ও কষ্টের মধ্যে মানুষ নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য দল বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এভাবে আত্মরক্ষার জন্য মানুষ দলবেঁধে থাকতে শুরু করে এবং সমাজ জীবনের শুরু হয়।

শিশুর বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক
পরিবার শিশুটির খাদ্য, বস্ত্র, আরামের চাহিদা মেটায়, নিরাপদ পরিবেশ দেয়, নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। শিশুটির এই প্রয়োজন মেটাতে খাদ্যশস্যের জন্য কৃষক, কাপড়ের জন্য তাঁতি, চিকিৎসার জন্য ডাক্তার, শিক্ষার জন্য শিক্ষক এভাবে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ পরিবারটির সাহায্যে এগিয়ে আসে। সমাজের এই সহযোগিতা ছাড়া পরিবারের একার পক্ষে চলা সম্ভব হয় না। এভাবে পরিবার ও সমাজ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। শিশু যেমন পরিবারের একজন সদস্য, তেমনি সমাজেরও একজন সদস্য।

বর্তমানে আমাদের চাহিদা অনেক বেশি ও বহুমুখী। পরিবারকে সহায়তার জন্য অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শিক্ষা ও আচরণের জন্য স্কুল ও কলেজ, স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতাল, সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য আইন-আদালত, পণ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। যদিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিবারকে অনেক কাজে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে, তবু শিশুদের জন্য প্রাথমিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিবারকেই গ্রহণ করতে হয়। যেমন- শিশুর স্বাস্থ্য, আস্থা ও নিরাপত্তার অনুভূতি দেওয়া, গ্রহণযোগ্য সামাজিক আচরণ শেখানো ইত্যাদি।

প্রত্যেক সমাজে কিছু নিয়মনীতি থাকে। পরিবার সমাজের এসব নিয়মনীতি অনুযায়ী শিশুকে আচরণ করতে শেখায়। সবার সাথে ভালো ব্যবহার, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, সহযোগিতা করা ইত্যাদি আচরণ সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য। অপরদিকে ঝগড়া, মারামারি করা, খারাপ ব্যবহার, পরিবেশ নোংরা করা, অন্যের সম্পদ নষ্ট করা ইত্যাদি আচরণ সমাজ আশা করে না। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। সঠিক ও গ্রহণযোগ্য আচরণ নিয়ে শিশু বেড়ে উঠলে সমাজ ও দেশের উন্নতি হয়। এভাবে প্রতিটি শিশু পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে।

কাজ ১-পরিবারের সদস্য হিসেবে তোমার কী ধরনের দায়িত্ব পালন করা উচিত তা লেখো।
কাজ ২-তুমি কী গুণাগুণ নিয়ে বেড়ে উঠলে সমাজের উপকারে আসতে পার তা লেখো।
Content added By
Promotion